আমার শৈশবের তৃতীয় নয়ন, আমার শিক্ষাগুরু জহিরুল মিঠু স্যার। তাঁর শৈল্পিক মনোভাব ও শিল্পচর্চায় ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহিত করা বরাবরই আমাকে খুব মুগ্ধ করতো।
আমি তখন পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ নিতাম। মিঠু স্যার আমাকে সবসময়ই উদবুদ্ধ করতেন ছবি আঁকায়, প্রায়ই ছবি এঁকে দিতে বলতেন। ছবি এঁকে দিলে আবার সেই ছবি, তাঁর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের খুব গুরুত্ব নিয়ে দেখাতেন। যদিও খানিকটা লজ্জাবোধ হতো, কিন্তু একইসাথে গর্বে বুকটা ফুলে উঠতো, আরো ভালো ছবি আঁকার স্পৃহা জাগতো।
একবার আমাকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর পোট্রেট এঁকে দিতে বললেন, আমি এঁকে দিলাম। সেই পোট্রেট আবার রবীন্দ্রনাথ-নিয়ে ক্লাশ করাতে গিয়ে দেখালেন তাঁর ছাত্রদের। সে তো অনেক আগের কথা। আমি রীতিমতো ভুলেই গেছিলাম সেই ছবির কথা, কিন্তু স্যার ভুলেননি। এইতো, কিছুদিন আগেই, এতো বছর পর ফেসবুকে সেই ছবি পোষ্ট করে আমাকে ট্যাগ করে দিলেন। দেখেতো আমার আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা!
স্যারকে একবার একটি ফতুয়াতে গ্রাম-বাংলার দৃশ্য এঁকে দিয়েছিলাম। সেই ফতুয়াটা নাকি এখনো তিনি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন, সাথে রেখেছেন আমার আঁকা সব ছবি। কি অবাক করা বিষয়!
জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে যখন আমরা এগিয়ে যাই অনেক দূর, হয়তো অনেক সময় মনেও থাকে না আমাদের শৈশবের সেই গুরুদের, কিন্তু তাঁরা ঠিকই আমাদের মনে রাখেন, তাঁদের আশীর্বাদ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাই।
আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান, মিঠু স্যার-এর মতো একজন সংস্কৃতিমনা শিক্ষক পেয়ে। তিনি একজন প্রকৃত শিক্ষক, একজন সক্রিয় সংস্কৃতিকর্মী, একজন প্রতিভাবান কবি। দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছেন সাহিত্যচর্চা, লিখেছেন অসংখ্য কবিতা।
এবারের মহান একুশে বই মেলাতে আসছে মিঠু স্যার এর ৭১টি কবিতা নিয়ে বইঃ “অহংকারে পা পড়ে না বার্ধক্যের উঠোনে”। বইমেলা-তে যারা যাচ্ছেন, অগ্রদূত এন্ড কোম্পানির ৩৩১ নং স্টল থেকে মিঠু স্যার-এর বইটি সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।
Leave a Reply