fbpx

রাজনৈতিক নেতা আর মূল্যবোধ

আজকাল দেশের অবস্থা বিচার করলে ইচ্ছা করে, যদি আবার ১৫ টা বছর আগে ফিরে যেতে পারতাম! হেসে, খেলে, আনন্দে, বেদনায় দিনগুলো ঠিক পার হয়ে যেত। সময় অসময়ে হুট হাট করে বাড়ি থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে এদিক ওদিক চলে যেতাম নির্দ্বিধায়। সময় ছিল সবার। খুব সহজেই আনন্দ টা ভাগাভাগি করে নিতে পারতাম। দিনগুলো কেমন যেন হারিয়ে গেছে।

ধর্ম আর ধার্মিকতার মধ্যকার পার্থক্যটা সেই দিনগুলোতে কোনদিন বোঝা হয়ে ওঠে নি। প্রয়োজন ছিল না বোঝার। শুধু বুঝতাম কাউকে দেখলে সালাম/ নমস্কার/ বা ভক্তিভরে কুশল বিনিময় করতে হয়।ভদ্রতা বজায় রাখার জন্য যতটুকু প্রয়োজন বিনয়ের সাথে তা পালন করাই পরিবার থেকে শেখানো হয়েছিল।

কিন্তু আজকের চাপাতিমনা বাস্তবতা সহজ করে দেশের মায়া ত্যাগের সীমারেখাটা অবলীলায় টেনে দেয়। দেশের উন্নতির কথা যদি বলতে হয়, ধরা যাক আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের কথা। ভিক্ষা করে করে জীবনটা এদের যে কত নিচে নেমে গেছে তা আর গোনায় ধরা যায় না। দেশের রাজনৈতিক নেতা, নাহ! এদের কে নেতা বলা যায়? কি করে যায়? নেতা ছিল যারা সব মরে পছে গলে শেষ।

আজকালকার নেতাদের কে ঠিক নেতা বলা যায় না। গণ্ড মূর্খের দল সব, হাতে গোনা কয়েকজন কে বাদ দিয়ে। আর সেই হাতে গোনা কয়েকজন দিয়ে পুরো দেশটা চালানো সম্ভব নয়। গদি বাঁচানই যাদের পরম ধর্ম ওদের দেশের কথা ভাবলে চলে না। দেশ টা থাকাটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। না হলে ভিক্ষার জায়গাটাও থাকবে না এদের কারো। দেশে যদি এত বড় বড় ভিক্ষুক থাকে দেশের উন্নতি কোনদিনও সম্ভব নয় ।ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়া দুঃস্বপ্ন। ৫ বছর পর পর এদের ভিক্ষা বিত্তি এতটাই ছ্যাঁচড়ামি আর চাটুকারিতায় ভরা থাকে যে ৫/৬ মাসের বিক্ষা বিত্তি দিয়েই লাইফ টাইম নো চিন্তা ডু ফুর্তি মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে একেক জন। অমুক মার্কায় ভোট দেবেন কিন্তু কেমন! হাত দুটো মোচড়াতে মোচড়াতে বলবে, আমরা তো আছি, থাকব সব সময় আপনাদের পাশে। দেশ নিয়ে একদম ভাববেন না ওটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন। হাতের তালু চুলকে চুলকে কথা গুল বলতে একটুও লজ্জা করে না।

এরপর আসি ক্ষমতা পাওয়ার পর-
সদ্য নির্বাচিত নেতা, গদিখানায় বসে এক পায়ের উপর আর এক পা তুলে ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে বলবে, হানিমুন টা সেরে আসা যাক। কত নাম্বার হানিমুন সেটা মুখ্য বিষয় নয়। পকেট গরম বলে কথা! আর না থাকলে ক্ষতি কি! দেশের জনগন আর বিজনেস প্রতিষ্ঠান গুলর কাছে পকেট থেকে হাত টা বের করে সযত্নে বলবে, দে বাবা , হাত টা ভরে দে দেখি, না হলে ফাইল টা আটকে থাকবে, বিল টা পাশ হবে না, টেন্ডার টি পাওয়াটা খুব মুশকিল।

আর জনগনের চাওয়া পাওয়ার কথা আসলে, সুর টা পালটে হয়ে যায় ঠিক এই রকম-
ভোটের আগে কিছু কি বলেছিলাম? বললেও ঠিক মনে পরে নাতো! ওই ছাইপাশ কথা রাখে রে কেউ? দেশ এর কথা ভাইবা হয় কি হ্যাঁ? কে মরল , কাম্নে মরল , কারা মারল, এত কিছু ভাইবা দরকার কি? ক্ষেমতা ধইরা রাখাই হইল আসল কাম। দেশের মধ্যে মানুষ থাকনটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই রকম ১০/১২ জন মরলে কিচ্ছু আসে যায় না । বুরা আঙ্গুলটা সামনে ধইরা দেমাকের সুরে ঠেঙা দেখাইয়া দেশবাসীরে কচু পোড়া খাওয়ানোই পরম ধর্ম বইলা কথা। দেশ উদ্ধার হয়। হয় না? হয় তো। গদি রক্ষা হয়। আর বাকিটা? বাকিটা বেক্তিগত । নান অফ ইওর বিজনেস । বোঝা গেল ? এবার আপনি আসুন। এই হল আমার আপনার স্বাদের দেশ বাংলাদেশ এর বাস্তব চিত্র।

এবার আসি বাংলাদেশে জীবনের মূল্য নিয়ে-
বাংলাদেশ যখন একদম চুপচাপ হয়ে যায় তখনি মনে হয় বড় কোন ঝড় আসছে। চিন্তা করে দেখুন কেমন এক অস্বস্তি হয় মনের ভিতর। একদম শান্ত হয়ে গেলে ভয়টা বেশি লাগে। কেন এইভাবে একের পর এক মানুষ গুলকে মারছে? বাংলাদেশ কে এভাবে কখনো দেখবেন বলে ভেবেছেন কোনদিন? ধর্ম তো শেখায় না মানুষ মারতে। বলুন শেখায়?
কেন তোমরা বোঝো না ? কেন তোমরা ছুরি দিয়ে কোপটা দেয়ার আগে মানব ধর্ম তোমাদের ভাবায় না? নিজেদের কোন ধর্মে লালিত করছ তোমরা? এই ধর্ম তো চিনি না, এই ধর্ম তো জানি না, বুঝিও না। শুধু দেখেই যাচ্ছি আর মানুষ জবাই হয়েই যাচ্ছে। যে ধর্ম মনে দাগ কাটে না, ভাবায় না, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে বিশ্বাসের স্থাপনা হয় না, তাহলে এ কেমন ধার্মিকতা? দিনের পর দিন একের পর এক এরকম ঘটনা ঘটে যায় আর একটা একটা করে লাশ এর সংখ্যা বাড়ে। আর দেখেই যাচ্ছি।

থামবে কবে ? এই প্রশ্নের উত্তরটা আমার যেমন জানা নেই তেমনি আপনিও বোধকরি জানেন না। অতয়েব উত্তরের আশা করা বৃথা। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর ও আমি কেবল স্বাধীনতাই খুঁজি। স্বাধীনতার আসল স্বাদটুকু আদৌ আমি পাইনি। স্বাধীনতার স্বপ্নটা শুধুই স্বপ্ন হয়েই রইল। শুধু মাঝেমধ্যে বুকটা যন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠে। এই আর কি!

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*