fbpx

বন্দুকযুদ্ধ – অ্যা কিউরিয়াস ফিকশন

বন্দুকযুদ্ধ – অ্যা কিউরিয়াস ফিকশন
বন্দুকযুদ্ধ – অ্যা কিউরিয়াস ফিকশন

আমরা যারা বাংলাদেশিরা আছি প্রায় অনেকেই ভারতীয় বলিউড ছায়াছবি দেখে থাকি। আর যারা নিয়মিত বলিউড ছবি দেখেন তাঁরা কিছু কমন ঘটনার সাথে খুবই পরিচিত। বলিউড সাম্প্রতিক সময়ে ভুরি ভুরি ছবি করেছে সাহসী পুলিশ অফিসার, পুলিশের ঘুষ খাওয়া, সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান, নেতার বিরুদ্ধে অভিযান ইত্যাদি অনেক অনেক বিষয়।

তবে সব ঘটনাগুলোর মধ্যে একটা কমন ঘটনা হলো আন্ডারগ্রাউন্ডের সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলা, এবং কোন কোন সময় এও দেখা যায়, কোন বড়ো সন্ত্রাসীকে বাঁচাতে সাধারণ নিরীহ কোন মানুষকে মেরে ফেলে তাকে সন্ত্রাসী নাম দিয়ে দেওয়া। এইসব কিলিং বা কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাম দিয়েছে তাঁরা “এনকাউন্টার”। যারা বলিউড সিনেমা দেখেন, তাঁরা এই শব্দের সাথে সুপরিচিত।

মনে পড়ছে কিছু? সিনেমার গল্পের একটা প্লট উদাহরণস্বরূপ দিলেই মনে পড়ে যাবে।

গল্পের শুরুতেই দেখা যায় একজন ভ্রষ্ট নেতার ছায়াতলে আন্ডারগ্রাউন্ডের কিছু সন্ত্রাসী দেদারসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নির্ধারিত কিছু এলাকায় প্রতিনিয়ত মারধর, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ সহ নানাবিধ সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। তাদের আবার একজন গডফাদার থাকে, যে সুদূর দুবাই অথবা সৌদি আরবে সুইমিং পুলে মেয়েদের নিয়ে লীলাখেলা করে, এবং সন্ত্রাসীরা সেই গডফাদারের নির্দেশ অনুযায়ী দেশে লুটতরাজ চালিয়ে যায়। সেই সন্ত্রাসীদের মধ্যে থাকে আবার বিভিন্ন গ্যাং বা গ্রুপ। যারা নিজেরা নিজেদের মধ্যেও মারামারি, ঝগড়া, বন্দুক যুদ্ধ ইত্যাদি করে। তাদের আবার পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের বড় বড় নেতারা। তাদের মধ্যকার ঝগড়ার রেশ আবার সেই নেতাদের মধ্যেও দেখা যায় মাঝে মধ্যে। আবার এইসব ঝগড়া বিবাদ মিটমাট করার অসাধারণ ক্ষমতা রাখেন সেই গডফাদার, এক নিমিষেই তাঁর ধমকে সকল ধরনের কোন্দল ও ঝগড়া বিবাদ মিটমাট হয়ে যায়। ঠিক তখনি এলাকায় আগমন ঘটে এক নতুন পুলিশ অফিসারের। সেই অফিসার স্রোতের বিপরীতে চলা একজন অফিসার। অন্যায় সহ্য করতে পারেন না। হয়তো কখনো তার পরিবারের কেউ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয়েছিলো এবং তার পর থেকেই তিনি সন্ত্রাসীদের প্রতি এক ধরনের মারমুখী ভাবনা পোষণ করেন। কিন্তু আইনের বিচারের ওপর তিনি আস্থা রাখতে পারেন না। কারন অনেক কষ্ট করে গ্রেফতার করার পর দেখা যায় আইনের গলিঘুপচি দিয়ে আসামীরা বের হয়ে আসে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার। এবং তাই সন্ত্রাসী ধরার পরই বিভিন্ন ঘটনা সাজাতে থাকেন। কমন একটি ঘটনা, যাতে দেখানো হয়, সন্ত্রাসী ধরার পর তাকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছেন একটি পুলিশ ভ্যান এ করে। কিন্তু মাঝ পথে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে আসামী কে বলেন পালিয়ে যেতে। আসামী পালাতে গিয়ে ইতস্ততা বোধ করলে তিনি একরকম জোর করেই তাকে পালাতে বাধ্য করেন। এবং যখনই আসামী পালাতে চায়, তখনই তিনি গুলি করে আসামীকে মেরে ফেলেন। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘এনকাউন্টার’ বা বিচারবহির্ভূত হত্যা। এবং সেই ‘এনকাউন্টার’কে জাস্টিফাই করতে তাঁর সাথে থাকা কোন এক কনস্টেবল এর হাতে বা পায়ে গুলি করে দেন এবং আসামীর হাতে একটি বন্দুক ধরিয়ে দিয়ে মিডিয়াকে ডেকে বলেন আসামী তাদের হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাঁর কনস্টেবল পালাতে বাঁধা দিলে আসামী তাকে গুলিবিদ্ধ করে এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন কোন উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি আসামীকে গুলি করে হত্যা করা বা ‘এনকাউন্টার’ করতে বাধ্য হন। এতে করে তিনি বীরত্বের জন্য মিডিয়াতে জয়জয়কার হাসিল করে নেন তার সাথে প্রাপ্য হয় রাষ্ট্রের দেওয়া মেডেল বা পুরষ্কার। কিন্তু ঘটনা আরও সামনে এগুতে থাকলে দেখা যায় যে আসামীকে তিনি হত্যা করেছিলেন, সে আসলে মূল আসামী নন, বরং মূল আসামীর পাতানো একটি ফাঁদ মাত্র। সেই মূল আসামী নিজের অপরাধ বাঁচাতে ভুল তথ্য দিয়ে ধরিয়ে দেয় একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে, যাকে হত্যা করে পুলিশ অফিসার মেডেল লাভ করেন। শুরু হয় অনুশোচনা। এবং সেই অনুশোচনা থেকেই আরও আবেগী হয়ে এক পর্যায়ে মূল আসামীকে খুঁজে বের করে সবার অজান্তে হত্যা করে ফেলেন পুলিশ অফিসার।

এটি ছিলো বলিউড মুভির একটা প্রচলিত প্লট। কতো ভালো লাগে এই একশনধর্মী মুভিগুলো দেখতে, তাই না? কিন্তু বাস্তবে যদি এমন ঘটনা চোখের সামনে ঘটে যায়, তখন?

বলতে খারাপ শুনালেও আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকটা এমনই হচ্ছে। মাদক-দমন অভিযানের নাম করে দেদারসে একের পর এক বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরবেন, খুব ভালো কথা, তাদের ধরে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন। শুনেছি ইয়াবা বিষয়ক একটি নতুন আইনও প্রণয়নের ব্যবস্থা চলছে, যাতে থাকবে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড। খুব ভালো কথা, এই বিষয়ক কোন আইন নাই, নতুন আইন প্রণয়ন করবেন, এই সিদ্ধান্তের সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আইন করে কি লাভ? সেই আইনের আওতায় যদি বিচারই না করা হয়, তাহলে এই আইন দিয়ে আমরা কি করবো? শুধু বই পুস্তকে পড়ার জন্যই কি এই আইনের প্রণয়ন?

যে সরকার আইন করে তার সঠিক প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হন, তাকে কি ব্যর্থ সরকার বলা যায়? এমনটা বললে মনে হয় না খুব বড় অন্যায় হবে। তবে সব বিষয়ে ব্যর্থ বা ব্যর্থ হচ্ছেন এমন কিন্তু বলছি না, ভালো কাজের অবশ্যই প্রশংসা করা উচিত, এবং করি। কিন্তু তাই বলে এধরনের অন্যায় মেনে নেওয়া অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব না। চাটুকাররা সারাজীবন চাটুকারিতা করে যাবে, আপনাদের ন্যায়-অন্যায় সকল বিষয়কেই “ভালো” “ভালো” “খুব ভালো” বলে যাবে। তাতে আবেগে আপ্লুত হওয়ার কোন কারন নাই। আমাদের মতো আরও যারা আছেন, যারা কিনা ভালো কে ভালো ও মন্দ কে মন্দ বলার অধিকার ও সৎ সাহস রাখে, তাঁরা যখন আপনাদের ভুল গুলো নিয়ে কথা বলে, তখন অবশ্যই আপনাদের চিন্তা করা উচিত, ভুল শুধরানোর চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু বলতে খারাপ শোনা গেলেও এটা সত্যি যে, বাস্তবে আমরা দেখতে পাই সম্পূর্ণ এক ভিন্নরূপ।

মাদক বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছি, বিচার বহির্ভূত হত্যায় নয়। এ ধরনের কথা যখন কেউ বলে তখনই আপনারা উদাহরণ টেনে আনেন পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের, তাঁরাও এমন করেছিলেন তখন আমরা কোথায় ছিলাম-এই টাইপের প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু একটা সভ্য দল/সরকার (যাকে সভ্য বলেই বিশ্বাস করতে এবং দেখতে চাই) -এর কাছ থেকে এধরনের শিশুসুলভ আচরণ বড় কষ্ট দেয়।

এই যে ধরুন, গত সপ্তাহে আপনাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা করলো আপনাদেরই দলের এক নিরপরাধ পৌর কমিশনার একরামুল হক-নামক এক নিরপরাধ ব্যক্তিকে। হত্যা করে তাকে আবার ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বৃথা চেষ্টাও অবলীলায় চালিয়ে যাচ্ছে আপনারই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রথমে সবাই এই ভুল তথ্যে বিশ্বাস করলেও চিন্তার মোড় ঘুরে যায় তাঁর মৃত্যুর সময়ে তাঁর স্ত্রীর ফোনে রেকর্ডকৃত অডিও টেপটি শোনার পর। কি ভয়াবহ অবস্থা! একজন নিরীহ-নিরাপরাধ ব্যক্তি, যিনি নিতান্তই মধ্যবিত্ত পরিবারের, দারিদ্রতা যার পিছু ছাড়ে না, স্বল্প অর্থে এবং কোন রকম ধারদেনা করেই যিনি সংসার চালাতেন, তাকে রাতের আঁধারে ডেকে নিয়ে গিয়ে আপনারই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‍্যাব তাঁকে গুলি করে হত্যা করে, এবং পরক্ষনেই প্রেস রিলিজ দিয়ে দেয় বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত! যারা অডিওটেপটি শুনেছেন, তাঁরা খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন কি হয়েছিল সে রাতে। একরামুল কে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তাঁকে গুলি করে মেরে ফেললেন। আর ফোনের এ পাশ থেকে তাঁর স্ত্রী ও বাচ্চা দুটো মেয়ের শুনতে হলো গুলিবিদ্ধ স্বামী/পিতার গোঙ্গানি। আর আমাদের শুনতে হলো সেই পরিবারের কান্না ও আহাজারি। কি নির্মম ভাবে হত্যা করে ফেললেন আপনারা! অডিও টেপ শুনেই বোঝা যাচ্ছিলো তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিসারদের কাছেই বন্দি আছেন। এবং সেই অফিসাররা একদম তাঁর পাশেই ছিলেন, তা তাদের শব্দও শুনেই বুঝা যাচ্ছিল। তো আমার প্রশ্ন হলো, সেই ব্যক্তি যদি আসলেই মাদক ব্যবসায়ী হয়ে থাকতেন, তাহলেও তাঁকে হত্যা করার অধিকার দিয়েছে কে? এই অধিকার তো আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেউ দেয়নি!

আওয়ামী ঘরানার অনেককেই বলতে শুনেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ভুল তো আর সরকারের ডায় হতে পারে না, কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো, ষড়যন্ত্র হওয়ার মতো সুযোগ তৈরি করবেন কেনো? আর ষড়যন্ত্র হলেও কেনো কঠোর হস্তে দমন করতে পারছেন না আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?

আমার এখনো মনে আছে, আমরা তখন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে অনলাইন-অফলাইনে সরব, নিয়মিত লেখালেখি করছি। ঠিক ওই সময়টাতেই জামাতিরা ব্যস্ত ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং করতে। এবং তারা অনেকটা সফলও হয়েছিলো। বিশ্বের বড় বড় দেশ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছিল বাংলাদেশ সরকারকে। সেই সকল বড় বড় চাপ ও ষড়যন্ত্রের তোয়াক্কা না করে আমাদেরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন, যার কারনে আমরা সবাই তাঁকে আয়রন লেডী উপাধি দিয়েছিলাম। প্রশ্ন হলো এতো বড় বড় আন্তর্জাতিক চাপ ও ষড়যন্ত্র যিনি নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন, তিনি কি তাঁর নিজের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ষড়যন্ত্র (যদি হয়ে থাকে) রুখতে পারেন না? অবশ্যই পারেন।

তাই বুঝতে বাকি থাকে না যে এখানে কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে না। তারপর এ বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনার নিন্দা প্রকাশ শুরু হওয়ার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী  ও বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর মতো একজন সিনিয়র ব্যক্তি বলেন,  “এ ‌‌ধরনের অভিযানে দুই-একটি ভুল হতেই পারে”। তাঁর এই কথাতেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে সরকার বুঝতে পেরেছে যে তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভুল করেছে এবং তা জাস্টিফাই করার জন্যই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। সুতরাং বর্তমান সরকার এই হত্যার দায় একেবারে এড়িয়ে যেতে পারবে না। কারন আমরা যারা বাংলাদেশে বড় হয়েছি কিংবা বাংলাদেশকে কাছে থেকে দেখেছি, তারা স্বাভাবিকভাবেই একটা বিষয় জানি যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বড় কোন অভিযান সরকারের নির্দেশের বাইরে গিয়ে করেন না, এবং উপরমহলের নির্দেশ ছাড়া তারা এক চুলও নড়েন না, যতদিন সম্ভব হয় ঘটনা ঘটতে দেন এবং নানাভাবে তার ফায়দা লুটতে থাকেন (যেমন ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি)।

সন্ত্রাসী যত বড়ই হোক না কেন, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কঠোর শাস্তি প্রদানের মাধ্যমেই জণমনে আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা করে একটি দেশ চলতে পারে না। আর নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে কখনোই জনগণের আস্থা সঞ্চয় করতে পারবেন না। এধরনের ঘটনা শুধু মাত্র আতঙ্কবাদী দল গুলো করে থাকে। আমরা আওয়ামীলীগ সরকারকে কোনভাবেই একটি আতঙ্কবাদী দল হিসেবে দেখতে/বিশ্বাস করতে চাইনা। এবং তা আওয়ামীলীগকেই প্রমাণ করতে হবে, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

আর হ্যাঁ, উপরে যে মুভির প্লট লিখেছি, তার সাথে তো উপরের এই হত্যাকাণ্ডের মিল পেয়েছেন। এবার বলি, প্লটটির শেষের দিকে দেখেছিলেন যে একজন গডফাদার থাকে, যিনি দুবাই অবস্থান করেন এবং সব কিছু থেকেই পার পেয়ে যান। আমাদেরও অনেকটা এমনই ঘটেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী, মাদকের গডফাদার নামে যার পরিচিতি, কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুর রহমান বদি। বদি সম্পর্কে আমার নতুন করে বলার মতো আসলে কিছু নেই। গুগলে “বদি ইয়াবা” লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি তথ্য। সম্প্রতি মাদক বিরোধী এই অভিযান শুরু হওয়ার পর পর অনলাইন এবং অফলাইনে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা, দল-মত নির্বিশেষে সব মানুষেরই দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের মূল হোতা আবদুর রহমান বদিকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

উল্লেখ্য যে, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত দেশের শীর্ষ মাদক ব্যসায়িদের সর্বশেষ তালিকায়ও আবদুর রহমান বদির নাম ছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান যখন তুঙ্গে, তখন বৃহস্পতিবার (৩১ মে)  মধ্যরাতে একটি বেসরকারি বিমানে হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তিনি ওমরা পালনে সৌদি আরবের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন, মেয়ে, মেয়ের জামাই, বন্ধু আকতার কামাল ও মৌলানা নূরী। এমপি বদির হঠাৎ দেশত্যাগ করে সৌদি আরবে গমনকে মাদক বিরোধী অভিযান থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে দেখা কি তাহলে খুব অন্যায় হবে? তবে বদির ভাষ্য তিনি ভয়ে পালাননি, বরং নিয়ম অনুযায়ী তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ওমরা পালন করতেই সৌদি যাচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় যখন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রকাশ করেন, স্বভাবতই বিভিন্ন তথ্য জাচাই-বাছাই করেই করে থাকেন। আর লোকমুখে শুনা কথা তো আছেই, বদি একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং বাংলাদেশের মাদক ব্যবসার প্রায় অনেকটাই তিনি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন বহুদিন ধরে। তাহলে সারাদেশে মাদক বিরোধী এই অভিযান চলাকালীন সময়ে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষ আসামী কিভাবে দেশ ত্যাগ করে? আর বদির দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই দেশত্যাগ করেছেন, এই অনুমতিইবয়া তিনি কিভাবে পেলেন?

বদির মতো চিহ্নিত অপরাধীরা আইনের ধরা ছোঁওয়ার বাইরে অবস্থান করে আর একরামুল-এর মতো নিরীহ মানুষ গুলোকে নির্বিচারে হত্যা করে এক প্রকার জোরপূর্বক মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেনো? এর দায় কি আওয়ামীলীগ সরকার এড়াতে পারবেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই বা কি বলবেন এই বিষয়ে? উত্তর হয়তো কখনোই পাবনা, তবুও প্রশ্ন রেখে গেলাম! শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*