fbpx

কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা?

ইদানিং বেশ কিছু দিন ধরেই দেখছি পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে ফাঁস হয়ে যায় প্রশ্নপত্র। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ফলাও করে  প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে দেখে খুব অবাক হই। আরও অবাক হই যখন দেখি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রশ্নপত্রের অপেক্ষায় বসে থাকেন।

এভাবে শিক্ষাক্ষেত্রকে গলাটিপে হত্যার জন্য একমাত্র বর্তমান সরকার ব্যবস্থা তথা শিক্ষামন্ত্রীই দায়ী বলে আমার ধারনা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলছেন ভিন্ন কথা। মাননীয় এই মন্ত্রী বিভিন্ন সময় এই প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হাস্যকর মন্তব্য করেছেন। যেমনঃ প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া একটি গুজব মাত্র, কোচিং ক্লাশ থেকে ফাঁস হচ্ছে প্রশ্নপত্র, স্কুলে স্কুলে পাহারা বসানো আমাদের পক্ষে সম্ভব না ইত্যাদি ইত্যাদি।

একটি দেশের জন্য সবচেয়ে মুল্যবান সম্পদ হলো সে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আর সেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বুদ্ধিমত্তা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো যথাযথ শিক্ষা। কথায় আছে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। যে জাতি অশিক্ষিত, সে জাতি কোন দিন উন্নতির শিখরে পৌছাতে পারবেনা।

তবে আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা দেখে মনে হয়, সরকার দলের সবাই উপরের কথা গুলো বেমালুম ভুলেই গেছেন। এমন মনে হচ্ছে যেন সরকার নিজহাতে শিক্ষাক্ষেত্রকে গলাটিপে হত্যা করছেন।  প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

তবে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেক জনকেই। এটা অস্বীকার করছিনা। কিন্তু গ্রেফতারকৃতদের সবাই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র  বিক্রি করতেন, মুল হোতা কিন্তু এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

আর এভাবেই ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। তাঁরা শিখছে কিভাবে পড়াশোনা না করে পরীক্ষায় পাশ করা যায়, শিখছে চুরি বিদ্যা। চুরি বিদ্যায় পরীক্ষা পাশ করতে পারবে ঠিক, কিন্তু মেধার প্রকৃত বিকাশ আদৌ হবে না।

এই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারনে দেখা যাচ্ছে স্কুলের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটি যে টেস্ট পরীক্ষাতেও পাশ করতে পারেনি, সেও পেয়ে গেছে জিপিএ ৫। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, এধরনের জিপিএ ৫ পেয়ে কি লাভ? সারাবছর পড়াশোনা না করে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে করে ফেললো সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট।

আমি মাঝে মধ্যে ভয়ে থাকি, এই শিক্ষার্থীরাই তো এক সময় কলেজে পড়বে, মেডিক্যাল কলেজে পড়ে হবে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে পড়ে হবে ইঞ্জিনিয়ার। এক সময় শুরু করবে তাদের পেশাগত জীবন। ডাক্তার হয়ে চিকিৎসা করবে রোগীদের, ইঞ্জিনিয়াররা দেশের বিভিন্ন ফিল্ড-এ কাজ করবেন, বাসাবাড়ি তৈরি করবেন। তখনও কি তাঁরা চুরি করবেন? তাদের তো একাডেমিক ভিত্তিটাই ছিলো চুরি বিদ্যার, তাদের কাছ থেকে আর কিই বা আশা করা যায়? এধরনের কোন ডাক্তারের হাতে তো আমি আমার নিজের জীবন তুলে দিবো না কখনো, কিংবা এধরনের কোন ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে আমার বাসস্থানও বানাবো না। তারমানে আমি বলছিনা সবাই গণ্ডমূর্খ হয়ে যাচ্ছে বা চুরি করবে, কিন্তু যারাই এমন হবে, তাদেরকে নিয়ে আমার কিউরিসিটির আসলে শেষ নেই।

আমরাও পড়াশোনা করেছি, অনেক ভালো মার্কস হয়তোবা পাইনি। কিন্তু তাই বলে চুরি বিদ্যা শিখিনি। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতাম, কখন না শিক্ষক পড়া জিজ্ঞেস করে বসেন। সেই কারনেই পড়াশোনাতে বেশ ভালোই মনোযোগ দিতাম। পরীক্ষায় খুব ভালো মার্কস না পেলেও বিদ্যা-বুদ্ধিতে যথেষ্ট শিক্ষিত হয়েছি।

বর্তমান সরকার এই ধরনের শিক্ষার নামে কুশিক্ষার দায়ভার কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারবেন না। তাদের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। এভাবে দুই একজনকে গ্রেফতার করে লাভ নেই, বরং মুল হোতাকে খুজে বের করে বিচারের আওতায় আনা। প্রচলিত শিক্ষানীতি পরিবর্তনেরও প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতে অনেক পন্থাই অবলম্বন করতে পারেন, যদি স্বদিচ্ছা থেকে থাকে। এই সব পন্থা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করবো, যদি সরকারের কেউ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু দেখে কিছুটা ভালো বুদ্ধির উদয় হয়, তাহলেও তো খারাপ না, কি বলেন?

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*