কুখ্যাত রাজাকার আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলো। মুজাহিদ রাজাকার বাহিনীর স্থপতি ছিল। স্বাধীনতা বিরোধী কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিল এই মুজাহিদ। রাজাকার আর এই আলবদর বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে খুঁজে বের করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে তুলে দেয়া। তাদের কে হত্যা করা। নির্যাতন করা। আর পাকিস্তানি শাসন কায়েম করা।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর পর ১৯৭১ সালে মুজাহিদ বেছে বেছে ইসলামী ছাত্র সংঘের একান্ত ভক্ত আজ্ঞাবহ রাজাকার বাহিনী গঠন করে। দলের কমান্ডো নিজুক্ত করে জনৈক ফিরোজ মিয়াকে এবং দলটির সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য তৈরি করে। শুরু হয় এদের ট্রেনিং। মুজাহিদ এই রাজাকার বাহিনীর সামরিক এবং অর্থের মূল যোগানদাতা ছিল।
মুজাহিদের দ্বারা সকল স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকাণ্ড গুলোর সুস্পষ্ট প্রমান মেলে তৎকালীন সময়ের সংবাদ পত্রে প্রকাশিত সংবাদসমূহ থেকে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ১৯৭১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর মুজাহিদ ফরিদপুরে ইসলামী ছাত্র সংঘের এক জনসমাবেশে বলেছিল, যে সমগ্র ভারত হস্তগত করার আগে তার উচিৎ ছিল আসাম( ভারতীয় প্রদেশ) দখল করা। এবং সেখানে পাকিস্তানী শাসন কায়েম করা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজাহিদ ১৮১ফকিরাপুলে জনৈক ফিরোজ মিয়ার বাড়িতে থাকতো। এই ফিরোজ মিয়া যে রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিল সেটা প্রমানিত হয় মুক্তিযোদ্ধা ও কলামলেখক মাহবুব কামাল, সাংবাদিক জি এম গাউস এবং জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুস সালাম এই সাক্ষ্যতে। এই ফিরোজ মিয়ার বাড়ি ছিল তৎকালীন সময়ে রাজাকার বাহিনীর প্রধান কার্যালয়। সেখান থেকেই সকল প্রকার অভিযানের নীল নকশা তৈরি করা হতো। মুক্তি বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রও ছিল এই ফিরোজ মিয়ার বাড়ি। এলাকার লোকজন এর কথায় জানা যায় যে ওই বাড়িতে অসহায় মানুষদের চোখ বেঁধে নিয়ে যেতে দেখেছে অনেকে আর দিন রাত তাদের ভয়াবহ অত্যাচার, নির্যাতনের করুন আর্তচিৎকার শুনতে পেত। এই গুলো পরিচালনা ও অত্যাচারের মূল হোতা ছিল এই মুজাহিদ।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেপ্টেম্বর মাসে যখন এই পাক বাহিনিরা পরাজিত হতে শুরু করলো তখন এই মুজাহিদ পাকিস্তানের জয়ের জন্য তার কর্মকাণ্ড এবং কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করে। তৎকালীন মুক্তিকামী সাধারণ পূর্ব বঙ্গের জনগণের পরিবর্তে পূর্ব বঙ্গের ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা শুরু করে। এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লিস্ট ধরে ধরে এসকল বুদ্ধিজীবী এবং পেশাজীবীদের হত্যার আদেশ দেয়া শুরু করে। রাজাকার দল বাহিনী নিয়ে মুজাহিদ ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর নিহত বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তথ্য সরবরাহকারীর ভুমিকা পালন করে। বুদ্ধিজীবীদের নাম মুজাহিত নির্ধারণ করে এবং তাদের হত্যার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘেরাও করার কাজে মুজাহিদ ছিল অন্যতম নেতা।
রেফারেন্সঃ
৭১ এর মুজাহিদনামা
আল বদরের নেতৃবৃন্দ
কুখ্যাত এই রাজাকার বর্তমানে জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশের সাধারণ সচিব। চার দলীয় ঐক্য জোটের ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০১-২০০৭ সময়কালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ছিল। যেই রাজাকার ১৯৭১ এর কুখ্যাত রাজাকার ছিল যে বাংলাদেশ কে চাইনি, সেই রাজাকার ক্ষমতা থাকাকালীন সময় জাতীয় পতাকা গাড়িতে টানিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির কাছে সেই সময়টা ছিল অসহনীয় যন্ত্রণার। এই নরঘাতক শয়তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করে দেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছিল। উল্লেখ্য, এই মুজাহিদ, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণে পাকিস্তানী হায়নাদের সহাযোগিতা দান এবং ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্বদানের দায়ে অভিযুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশীরা ১৪ ডিসেম্বর তারিখটি শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস হিসেবে পালন করে।
Leave a Reply